তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংকট চরমে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি, মহিলা বিষয়ক, প্রকল্প বাস্তবায়নসহ প্রায় সব সরকারি অফিসেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে রয়েছে। এতে সরকারি সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর মোট ৭৩টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ফলে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তব্যরত অল্প সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ভূমি অফিসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ছাড়া বাকি ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পদ-কানুনগো, চেইনম্যান, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ইত্যাদি শূন্য থাকায় জমিজমা সংক্রান্ত কাজে সেবা পেতে ব্যাপক হয়রানির মুখে পড়ছেন সেবাপ্রার্থীরা।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে কেবল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রয়েছেন। বাকি সব পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অবস্থাও একই। কর্মকর্তাসহ ২৮টি পদ ফাঁকা থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এ দপ্তরের কার্যক্রম।
হিসাব রক্ষণ অফিসে একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও সপ্তাহে মাত্র দু’দিন অফিস করেন। এছাড়া অফিসটির জুনিয়র অডিটরসহ দুটি পদ দীর্ঘদিন শূন্য।
শিক্ষা খাতেও বিপর্যয়কর অবস্থা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ তিনটি এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ আরও তিনটি পদ শূন্য রয়েছে বহুদিন ধরে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকিসহ প্রশাসনিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিস, প্রকৌশলী অফিস, খাদ্য অফিস ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরেও রয়েছে একই সংকট। এসব অফিসে নলকূপ মেকানিক, সহকারী প্রকৌশলী, ক্রেডিট সুপারভাইজারসহ একাধিক পদ শূন্য থাকায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন থমকে আছে।
এছাড়াও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও কার্য সহকারী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, মৎস্য অফিসে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও ক্ষেত্র সহকারী-সব মিলিয়ে জনবল সংকটে জর্জরিত তেরখাদার সরকারি অফিসগুলো।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ শেখ, সোহেল তাজ ও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “কোনো কাজ নিয়ে অফিসে গেলেই বলা হয় লোক নেই। দিনের পর দিন ঘুরেও কাজ হয় না। এতে করে সাধারণ মানুষের চরম হয়রানি হচ্ছে।”
এ বিষয়ে তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা খুলনা গেজেটকে বলেন, “আপনাদের যেটা পর্যবেক্ষণ, আমাদেরও সেটাই। আমি একটি সমন্বয়কারী ভূমিকা পালন করি। প্রতিটি দপ্তরের প্রধানদের বিষয়টি তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। আমিও বিষয়টি উর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে তুলে ধরব। আশা করি দ্রুতই কিছু সমাধান আসবে।”
সচেতন এলাকাবাসীর মতে, দ্রুত জনবল নিয়োগ না হলে জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে। তাই তারা শূন্য পদে নিয়োগ দিয়ে জরুরি ভিত্তিতে সেবাদান কার্যক্রম সচল রাখার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
খুলনা গেজেট/এনএম